দরবারি মোল্লাদের আচরণ ও ভাবার বিষয়
লিখেছেন লিখেছেন ইসহাক মাসুদ ০৮ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৪২:৫৮ সন্ধ্যা
আমি অনেক দিন আগের কথা বলছি, যখন আমি ছাত্র। একটি মাদ্রাসার মাহফিলে চরমোনাই এর পীর সৈয়দ ফজলুল করিম সাহেব আসবেন। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে পীর সাহেবের ওয়াজ শুনতে যাই। আমি একটু আমুদে ছেলে, সহজে কন্না আসে না, আমার দাদা আমাকে খুবই স্নেহ করতেন, ছোটবেলা থেকে আমার বাবার চাইতে তিনি আমাকে আদার বেশি করতেন। সেই দাদা মৃত্যুতেও আমি কাঁদি নাই, কিন্তু পীর সাহেবের ওয়াজে আমি এতই কেঁদেছি যে, অনেক দিন পর্যন্ত পেটে ব্যথা পেয়েছি। পরে আমি তার ভক্ত হয়ে যাই। তার কিছুদিন পর ক্যাসেটে আল্লামা সাঈদির একটি তাফসির শুনেছি, সেখানে তিনি বলেছেন, পীর সাহেব বলেন, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী দল নয়, এর পর সাঈদী সাহেব বলেন, আপনি (পীর সাহেব) কথা বলে দীলিপ বড়ুয়ার ভাষায়, আপনি হুজুর, আপনি কথা বলেন রাশেদ খান মেনন এর ভাষায়, আপন কথা বলেন, সাইফুদ্দিন মানিকের ভাষায়, আপনি কথা বলেন, শেখ হাসিনার ভাষা, তাই জাতি মনে করে হয় আপনি ভারতের দালাল নয় আওয়ামীগীগের বেটি, আপনি কিচ্ছু করতে পারবেনা। অন্য ক্যাসেটে সাঈদী সাহেব বলতে শুনেছি, এই মানুষটি (পীর সাহেব) যত কালো তার অন্তর তার চাইতে বেশি কালো। সাঈদী সাহেবের কথা শুনে আমার মন মেজাজ এতই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, যদি সাঈদী সাহেবকে সামনে পাইলে অন্তত ১০০ টুকরা করি। অবশ্য সাঈদী সাহেবের অনেকগুলো তাফসির শুনে আমি তারও ভক্ত হয়ে যাই।
বর্তমানে বাম, নাস্তিক, তথাকথিত শাহবাগিরা সরকারের কাছে ৬ দফা দাবী দিয়েছে, তার মধ্যে একটি দাবি হল, সম্প্রদায়ীক দল নিষিদ্ধ করতে হবে। পরে সুকৌশলে তারা দাবি করেছে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, সকল ইসলামী দল না। আমি শাহরিয়ার কবিরকে একটি টক শোতে বলতে শুনেছি, আন্দোলনকারীরা তাকে নাকি অভিযোগ করেছে স্যার, আমরাতো পারি নাই, শাহরিয়ার কবির বলেন, আগে এটা শেষ কর। সরকারের কোন কোন মন্ত্রী সংবাদিকদের ও টিভির বিভিন্ন শো বলতে শুনেছি তাদের সকল দাবি মানা সম্ভব। আমি বুঝতে পারিনা কিভাবে সম্ভব। বিচারের কাজ আদালত করছে, বিচার হয় স্বাক্ষী সবুতের উপর। ৪২ বছর আগের ঘটনা, মানুষের স্মৃতির ভ্রষ্টতা থাকতে পারে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে পারে, স্বাক্ষীদের গ্রহণ যোগ্যতার একটি বিষয় আছে, সর্বোপরি সব কিছু প্রমানের পর রায় দেয়া ট্রাইবুনালে কাজ, সরকারের নয়, তাহলে শাহবাগিদের দাবি সরকার কিভাবে মানবে? শাহবাগিদের তথাকথিত দাবির প্রেক্ষিতে সরকার আদা জল খেয়ে সম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে সর্ব প্রথম জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করনের প্রকৃয়া শুরু করেছে। বিগত ৪ বছর থেকে তাদের কোন প্রকার রাজনীতি কর্মকান্ড, সভা সমাবেশ, মিটিং মিছিল, ইত্যাদি করতে দিচ্ছে না। বর্তমানে তাদেরকে পাখির মত গুলি করছে। ভাব যেন জামায়াত শিবির বিনদেশি কোন আগ্রাসী বা কোন ডাকাত দল, দেখা মাত্র গুলি কর, না হয় ধরে ধরে জেলে পুরো। এই নীতিতে সরকার এগোচ্ছে, দেশ জাতিগত বিভক্তির দিকে এগোচ্ছে। সরকার জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করা মানে বাংলাদেশের ইসলামী দল নিষিদ্ধ করা, বা সাম্প্রদায়ীক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। সরকার বুঝতেছে জামায়াতের কাছে অর্থের বিশাল যোগান আছে, সুশৃঙ্খল একটি কর্মী বাহিনী আছে। দেশে বিদেশে তাদের ব্যাপক সর্মর্থণ আছে। প্রশাসমে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ লোকবল আছে, বৃটেন আমেরিকার মত দেশের সর্মর্থণ আছে, যা চরমোনাই এর পীরের দল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন তথা অন্যান্য ইসলামী দলের কাছে একদম নাই। যদি কাউশাউ করে জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে পারে, সরকার বলবে, হুজুরের দল আপনারা রাস্তায় আসিয়েন না। খানকায় অথবা মাদ্রাসায় দরস তদরিস নিয়ে পড়ে থাকেন। রাস্তায় আপনাদের কাজ নাই। তখন চরমোনাই সহ ইসলামী সমমনা অন্যান্য দলগুলো কি বরবে। সরকারের বিরোদ্ধে প্রতিবাদ করা তাদের সেই ক্ষমতা কই? যেখানে জামায়াত পরাস্ত হচ্ছে আপনাদের কি ক্ষমতা আছে? এরপর সরকার আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারলে বাম ভারত ও নাস্তিকদের পরামর্শে মাদ্রাসাগুলোর এমপিও বন্ধ করে দিবে। আমরা জানি বৃটিশ আমলে শুধু ভঙ্গপ্রদেশে প্রায় আশি হাজার মাদ্রাসা ছিল, তখনকার মাদ্রাসা গুলো চলত ওয়াকফকৃত জমির আয় দিয়ে, বৃটিশ সরকার মাদ্রাসাগুলো সরাসরি বন্ধ করে দেয় নাই। তারা শুধু ওয়াকফ আইন বাতিল করে সকল জমি সম্পত্তি সরকার বরাবরে নিয়ে গেছে, ফলে এত সংখ্যক মাদ্রাসাগুলো অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের সরকার শুধু বলবে অসম্প্রদায়ীক দেশে মাদ্রাসা গুলো থেকে জঙ্গি তৈরী হচ্ছে, ধর্মান্ধ তৈরী হচ্ছে, সতারাং মাদ্রাসার এমপিও বন্ধ করে দাও। বাস মাদ্রাসা গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। কওমি মাদ্রাসাগুলো কথাতো বলাই বাহুল্য। আমাদের প্রজন্ম নাস্তিকের দেশে তথাকথিত প্রগতিশীলদের দেশে ধর্ম ছাড়া, ইসলামী ছাড়া বড় হবে! ৯০% মুসলমানের দেশে আশা করি আমরা তা কক্ষোনো চাই না। সুতারাং এখন ইসলামী দলগুলোর মরন কামড় দেয়ার সময়। কিন্তু অত্যান্ত আফসোসের বিষয় যে, আল্লামা সাঈদীর রায়ের পর ইসলামী দল ও আলেম ওলামারা শাহবাগের ঐ নাস্তিকদের বিরোদ্ধে যে ভাবে ফুসে উঠেছিল কেন জানি তা হঠাত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। আমাদের আইন প্রতিমন্ত্রী যে ওলামাদের মৌলবাদি মৌলবাদি বলে হুঙ্কার দিত সেই প্রতিমন্ত্রী মুখে আমাদের ওলামা মাশায়েখের আন্দোলন শব্দটি শুনে আতকে উঠি। বুঝতে বাকি রইলো না ডাল মে কুচ কালা হায়। জামায়াত শিবিরের এহেন করুন অবস্থা, সম্প্রদায়ীক রাজনীতি বন্ধের পায়তারা হচ্ছে, নাস্তিকদের উপদ্রপ বেড়ে গেছে, শোলাকিয়ার ইমাম, ইসলামী ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও দরবারি মোল্লারা সরকারের দালালী করছে। চরমোনাইয়ের পীরের দল অনেকটা নিরব, গতানুগতিক কর্মসূচি পালন করছে!!!!??? আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। আল্লামা সাঈদীর কথা খুব মনে পড়ছে তারা ভারতের দালাল নাকি হাছিনার, আমি জানি না।
এই লিখা পড়ে আমাকে কোন রাজনীতির দলের সদস্য ভাবার করাণ নাই। আমি রাজনীতি থেকে কয়েক মাইল দুরে থাকি।
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন